নক্ষত্রের মৃত্যু

নক্ষত্রের সৃষ্টি কীভাবে হয় তা এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। বিভিন্ন নক্ষত্রের মাঝে যে স্থান ফাঁকা বা শূন্য বলে মনে হয়, তা কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শূন্য নয়। ওই শূন্য স্থানে থাকে পাতলা এবং হালকা জলীয় বাষ্পীয় মেঘ। এই মেঘ কিন্তু সব স্থানে সমান পরিমাণে থাকে না। কোথাও এর ঘনত্ব কম এবং কোথাও ঘনত্ব বেশি। অধিকাংশ স্থানেই এর ঘনত্ব খুবই কম, যা প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ১০^-১৯ কিলোগ্রাম।আমরা জানি, দুইটি বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ বল নির্ভর করে বস্তু দুইটির ভরের গুণফল ও দুরত্বের ব্যস্তবর্গের ওপর। অতএব, কোনো বাষ্পীয় মেঘের ঘনত্ব যত বেশি, তখন মেঘের কণা গুলোর আকর্ষণ বল হবে তত বেশি। যদি এই আকর্ষণ বল অনেক বেশি হয়ে যায়, তাহলে মেঘের কণাগুলোর গতিও বেড়ে যায়।  যার জন্য বৃদ্ধি পায় মেঘের তাপ এবং মেঘটি নক্ষত্রের রূপ ধারণ করে ও হালকা লাল আলো ছড়ায়। কণাগুলোর আকর্ষণ বল তাপ ও আলোক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। নক্ষত্রের এই অবস্থাকে বলা হয় আদি নক্ষত্র।

যদি কণাগুলোর আকর্ষণ বলই নক্ষত্রের তাপ ও আলোর একমাত্র উৎস হতো, তাহলে নক্ষত্র বেশিদিন উজ্জ্বল থাকতে পারত না। প্রকৃতপক্ষে, নক্ষত্র তার অধিকাংশ শক্তি পায় কেন্দ্রীণ সংশ্লেষণ থেকে। যখন কোনো নক্ষত্রের তাপমাত্রা ২০ থেকে ৩০ লক্ষ্য ডিগ্রি কেলভিন হয়, তখন সেখানে শুরু হয় কেন্দ্রীণ মিথস্ক্রিয়া। এই অবস্থায় নক্ষত্রের হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো হিলিয়াম পরমাণু গঠন করে। চারটি হাইড্রোজেন কেন্দ্রীণ থেকে সৃষ্টি হয় একটি হাইড্রোজেন কেন্দ্রীণ। আমরা জানি, চারটি হাইড্রোজেন কেন্দ্রীণ এর ভর একটি হিলিয়াম কেন্দ্রীণ এর ভর অপেক্ষা একটু বেশি। এই অবশিষ্ট ভরটুকু শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তৈরী করা হয় হাইড্রোজেন বোমা। নক্ষত্র গুলো তাদের এই শক্তি থেকে প্রতি সেকেন্ডে কোটি কোটি হাইড্রোজেন বোমা বিষ্ফোরণ করে। এরপর ধীরে ধীরে সৃষ্টি হয় আরো ভারী কেন্দ্রীণ এর। এইভাবে হিলিয়াম কেন্দ্রীণ থেকে সৃষ্টি হয় কার্বন কেন্দ্রীণ এর এবং কার্বণ কেন্দ্রীণ থেকে সৃষ্টি হয় অক্সিজেন কেন্দ্রীণ। এমনকি এরপর অক্সিজেন কেন্দ্রীণ থেকে নিয়ন বা আরো ভারী কেন্দ্রীণ এর সৃষ্টি হয়।

এক পযার্য়ে আর এই বিক্রিয়া সংঘঠিত হয় না। এই অবস্থায় নক্ষত্রে সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে লোহা, কোবালট ও নিকেল এর মতো ভারী কেন্দ্রীণের। নক্ষত্রে এই বিক্রিয়ার ফলে নক্ষত্রের কেন্দ্রস্থল ক্রমেই সংকুচিত হয়, এবং আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তখন তৈরী হতে পারে শ্বেত বামন নক্ষত্রের। এই নক্ষত্রগুলো ক্রমশ ঠান্ডা হতে থাকে এবং তার উজ্জ্বলতা কমতে কমতে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কখনো কখনো এই অবস্থাকে বলে কৃষ্ণ বামন।

লেখকঃ অভিষেক দত্ত, ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় আইসিটি ক্লাব

Share

Add Your Comments

Your email address will not be published. Required fields are marked *